সাইনুসাইটিস (Sinusitis)
মাথার খুলিতে মুখমন্ডলীয় অংশে নাসাগহ্বরের দুপাশে অবস্থিত বায়ুপূর্ণ চারজোড়া বিশেষ গহ্বরকে সাইনাস বা প্যারান্যাসাল সাইনাস (paranasal sinus) বলে। এসব সাইনাস যদি বাতাসের বদলে তরলে পূর্ণ থাকে এবং সে তরল যদি জীবাণুতে (ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক)সংক্রমিত হয় তখন সাইনাসের মিউকাস ঝিল্লিতে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের সংক্রমণে সাইনাসের মিউকাস ঝিল্লিতে সৃষ্ট প্রদাহকে সাইনুসাইটিস বলে। সাইনুসাইটিস আট সপ্তাহের কম সময় থাকলে তাকে অ্যাকিউট সাইনুসাইটিস (acute sinusitis) এবং তিন মাসের অধিককাল থাকলে তাকে ক্রনিক সাইনুসাইটিস(chronic sinusitis) বলে ।
রোগের কারণঃ
১. সাইনাসগুলো বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস (Human respiratory syncytial virus, Paraintlueza virus, Metapneumo virus), ব্যাকটেরিয়া (Streptococcus pneumoniae, Haemophilus influenzae) এবং কিছু ক্ষেত্রে ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হলে সাইনুসাইটিস হতে পারে।
২. ঠাণ্ডাজনিত কারণে ; অ্যালার্জিজনিত কারণে; ব্যবধায়ক পর্দার অস্বাভাবিকতায় সাইনাস গহ্বর অবরুদ্ধ হয়ে; নাকে পলিপ (polyp) সৃষ্টির কারণে; নাসাগহ্বরের মিউকোসা স্ফীতির ফলে নাসাপথ সরু হয়ে ক্রনিক সাইনুসাইটিস হতে পারে।
৩. দাঁতের ইনফেকশন থেকে বা দাঁত তুলতে গিয়েও সাইনাসে সংক্রমণ হতে পারে।
৪. যারা হাঁপানির সমস্যায় ভোগে তাদের দীর্ঘস্থায়ী সাইনুসাইটিস দেখা যায়।
৫. সাধারণত ঘরের পোকামাকড়, ধুলাবালি, পেস্ট, তেলাপোকাজনিত বায়ুবিদূষণ যেসব অ্যালার্জেন ধারন তাদের প্রভাবে এ রোগের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
৬. ইউশিয়ান নালির (custachian tube) সামান্য অস্বাভাবিকতায় সাইনাস গহ্বর অবরুদ্ধ হয়ে এবং সংক্রমণের ফলে সাইনুসাইটিস হতে পারে।
রোগের লক্ষণঃ
১. নাক থেকে ঘন তরল বের হতে থাকে। এটি সাধারণত হলদে বা সবুজ বর্ণের হয় এবং তাতে পুঁজ বা রক্ত থাকতে পারে।
২. তীব্র দীর্ঘ ও বিরক্তিকর মাথা ব্যাথা লেগেই থাকে যা সাইনাসের বিভিন্ন অঞ্চলে হতে পারে।
৩. মাথা নাড়াচাড়া করলে, হাঁটলে বা মাথা নিচু করলে ব্যথার তীব্রতা আরো বেড়ে যায়।
৪. জ্বর জ্বর ভাব থাকে, কোন কিছুতেই ভালো লাগে না এবং অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যায় । ৫. নাক বন্ধ থাকে, নিঃশ্বাসের সময় নাক দিয়ে বাজে গন্ধ বের হয়।
জটিলতা
সাইনুসাইটিস সংক্রান্ত জটিলতা কেবল নাসিক গহ্বর ঘিরেই অবস্থান করে না, বরং সাইনাসগুলোর অবস্থান চোখ। ও মস্তিষ্কের মতো অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গের সংলগ্ন হওয়ায় জীবাণুর সংক্রমণ শুধু সাইনাসেই সীমাবদ্ধ না থেকে রক্তবাহিত হয়ে চোখ ও মস্তিষ্কে পৌঁছালে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্কে সংক্রমণের ফলে মাথাব্যথা, দৃষ্টিহীনতা থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। চোখে সংক্রমণের ফলে পেরিঅরবিটাল ও অরবিটাল সেলুলাইটিসসহ আরও অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
প্রতিকার
স্বেচ্ছাসতর্কতা : সাইনাসে জমাট বেঁধে অবস্থিত তরলকে বিগলিত করে সাইনাসকে চাপমুক্ত ও স্বাভাবিক রাখতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
গরম পানিতে ভিজিয়ে, চিপড়ে একখন্ড কাপড় প্রতিদিন বারবার মুখমণ্ডলে চেপে ধরা; মিউকাস তরল করতে প্রচুর পানি পান করা; প্রতিদিন ২-৪ বার নাক দিয়ে বাষ্প টেনে নেওয়া; দিনে কয়েকবার ন্যাসাল স্যালাইন স্প্রে করা; আর্দ্রতা প্রতিরোধক ব্যবহার করা: যন্ত্রের সাহায্যে নাকের ভেতর স্ববেগে পানি প্রবাহিত করে সাইনাস পরিষ্কার রাখা; বন্ধ নাক খোলার জন্য ন্যাসাল স্প্রে ব্যবহারে সতর্ক থাকা প্রথম দিকে ন্যাসাল স্প্রে ভালো কাজ করলেও ৩-৫ দিন একনাগাড়ে ব্যবহার করলে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারো; নাক বন্ধ অবস্থায় উড়োজাহাজে না চড়াই ভালো; এবং মাথা নিচু করে শরীর বাঁকানো অনুচিৎ।
ওষুধ প্রয়োগ : অ্যাকিউট সাইনুসাইটিসের চিকিৎসায় ওষুধের দরকার হয় না। তবে প্রয়োজনে দুসপ্তাহের চিকিৎসা চলতে পারে। জুনিক সাইনুসাইটিসের চিকিৎসা চলে ৩-৪ সপ্তাহ। ছত্রাকজনিত সাইনুসাইটিসের চিকিৎসায় বিশেষ ধরনের ওষুধ ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টিবায়োটিকসহ সমস্ত ওষুধ ব্যবহারে চিকিৎসকের পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী হতে হবে।
কোনো শিশু যদি নাক দিয়ে তরল-নির্গমনসহ ২-৩ সপ্তাহ ধরে কাশিতে, ১০২.২° F জুরে, মাথাব্যথা ও প্রচন্ড চোখফোলা অসুখে ভোগে তাহলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নির্দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ শুরু করতে হবে।